ভ্যাম্পায়ার বউ । The Vampire Wife

বিয়ে হয়েছে বেশিদিন হয়নি। এইতো ৭-৮
মাস। পরিবারের সম্মতিতে আমাদের
বিয়ে হয়। এরেঞ্জ ম্যারিঞ্জ হওয়াতে কেউ
ভ্যাম্পায়ার বউ।
কাউকে জানার সময় ছিল না। কিন্তু
আচমকাভাবে সে আমার পছন্দ অপছন্দ
জানতে লাগলো। তাকে আমি কিছুই বলি
নি। কিন্তু সেদিন ও আমার জন্য খিচুরি আর
ইলিশ মাছ ভাজা এনে বলল “তুমি না ইলিশ
মাছ খাওয়া ভালবাসো। ” ভাবছিলাম
সেটা আম্মা হয়ত বলেছে ওকে। কিন্তু ও
আমার এমন একটা সিক্রেট বলল যেটা আমি
ছাড়া সেটা অন্য কেউ জানে না। ও শুধু বলে
হাসি দিয়ে ওঠে চলে গেলো। আমি ঘুমালে
রাতে আর খবর থাকে না। বলতে পারেন
ভূমিকম্প আসা ছাড়া আমাকে উঠানো
মুশকিল। একদিন রাতে হঠাৎ করে উঠে
গেলাম। পাশে হাত দিয়ে চমকে উঠলাম। ও
নেই। লাইটটা অন করলাম। দেয়াল ঘড়িতে
দেখলাম প্রায় ২ টা বাজে। ভাবলাম
ওয়াশরুমে। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম ।
স্বাভাবিক দিন চলতে লাগলো। একদিন
রাতে আবার এরকম ঘটলো। সেদিন কেন যে
ইচ্ছে হল একটু চেক করার। ওয়াশরুমে গিয়ে
দেখলাম লাইট অফ। তারপর একে একে পুরো
বাড়ি খুঁজলাম। কিন্তু হতাশ হয়ে বেডরুমে
ফিরলাম। বেডরুমে এসে দেখলাম ও শুয়ে
আছে। কাছে গিয়ে ওর হাতটা নিলাম। ওর
কোন সাড়াশব্দ নেই। গভীর ঘুমে আছে ও।
বুঝায় যাচ্ছে না ও একটু আগে রুমে ছিল না।
আমি তাকে পুরো বাড়ি খুঁজলাম অথচ তাকে
পেলাম না। ওর কপালে চুমু খেলাম। হঠাৎ
করেই চোখ গেলো ওর ঠুটের দিকে। লাল কী
যেন লেগে আছে ওর ঠুটে। আমি হাত দিয়ে
দেখলাম। তরল কিছু, মুখে দিয়ে দেখলাম।
রক্ত! রক্ত। আমি ওর কপালে হাত দিলাম।
নার্ব চেক করলাম। সব ঠিক আছে । পরদিন
সকালে ওকে চেকআপ করার জন্য ক্লিনিকে
নিয়ে গেলাম। ও যেতে চাইলো না জোর
করে নিয়ে গেলাম । ডাক্তার বলল সব ঠিক
আছে। সেদিন রাতে ইচ্ছে করে জেগে
থাকলাম। কিন্তু ও সেই রাতে ঠিকভাবেই
ছিল। সারারাত ঘুমালো।
আমার মন থেকে সন্দেহ দূর হল। গতকাল
রাতেই আমি টিবি দেখে প্রায় রাত ২ টায়
ঘুমাতে গেলাম। বৃহস্পতিবারে আমি
সারারাত টিবি দেখে ড্রইংরুমে ঘুমিয়ে
পড়ি। শায়লা এটা জানে। আমার বউ অন্যসব
বউয়ের মত ছিল না। আমার
ছেলেমানুষিগুলা ও মেনে নিতো। সেদিন
ড্রইংরুমে না শুয়ে বেডরুমে গেলাম। গিয়ে
দেখলাম শায়লা বিছানায় নাই। ওয়াশরুমে
গিয়ে চেক করলাম ও নাই। আস্তে আস্তে
শায়লা! শায়লা! বলে ডাকতে লাগলাম
কোন সাড়াশব্দ নেই। ডাকতে ডাকতে প্রায়
বাড়ির বাইরে লনে এসে পড়লাম । বাড়ির
চারপাশ ঘুরে ডাকতে লাগলাম নিচু গলা
করে। হঠাৎ করে বাড়ির পিছনে গিয়ে
দেখলাম পিপুল গাছের নিচে শায়লা বসে
আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম ও কি যেন
খাচ্ছে। ওর মুখে তাকিয়ে দেখলাম ওর ঠুট
দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি গিয়ে ওর গায়ে
হাত দেওয়াতে ও আমার হাত ধরে এত
জোরেই ধাক্কা দিলো যে আমি কয়েক কদম
হাওয়াই ছিলাম। একটা মেয়ের গায়ে এত
শক্তি থাকে কি করে যে একটি পুরুষ
মানুষকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে কয়েক কদম
দূরে ফেলাবে। কিছু বুঝার আগেই ও আমার
কাছে দৌড়ে আসলো। আমার হাত ধরে
টেনে তুলল। “আই এম স্যরি, আই এম স্যরি “
বলতে বলতে কেঁদে দিলো। আমাকে ও
কোলে তুলে নিলো। আমার পরিস্থিতি
কেমন ছিলো একটু ভেবে দেখুন। মানুষ তার
বউ কে কোলে তুলে সেখানে আমাকে
আমার বউ কোলে তুলে নিলো।
আমি শায়লার কথা শুনে থ হয়ে গেলাম। কি
বলছে ও এসব। ও নাকি সাধারণ মানুষ না।
একজন ভ্যাম্পয়ার। মনে হচ্ছে মিথ সত্যি
হয়ে গেছে। কিন্তু ওর কথাগুলি ছিলো
খানিকটা এরকম ” তোমার সাথে বিয়ে
হওয়ার কয়েকবছর আগের কথা। আমি দাদু
বাড়ি সিলেটে গেলাম। আমার দাদু একজন
তান্ত্রিক ছিলো। সে অনেক জ্বীন কে
বশীভূত করে রাখতো। দাদু মারা যায় যখন
আমার বয়স ১৮। সেই সময় থেকে দাদুর একটি
জ্বিন আমার সাথে থাকতো। কিন্তু দাদুর
যেই জ্বিনটা আমার সাথে থাকতো সেটা
আমার প্রেমে পড়ে গেলো। ও আমার
রক্তের সাথে মিশে যেতে লাগলো। আস্তে
আস্তে আমি অসুস্থ হতে লাগলাম। অনেক
ডাক্তার দেখানোর পর ও সুস্থ হলাম না।
শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে লাগলো।
সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলো আমি আর
বাঁচবো না। একদিন সকালে বাবা একজনকে
নিয়ে এলো।জান উনি কে? তোমার বাবা।
তিনিই আমাকে দেখে যা বললেন তা
বিশ্বাস করার মত না। তিনি বললেন একটি
জ্বিন আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে।
আমাকে বাঁচানো প্রায় মুশকিল। আমার
পরিবার তা শুনে ভেংগে গেলো। তোমার
বাবাকে ওরা অনেক অনুরোধ করল। তোমার
বাবা একটি উপায় বের করে। আমার শরীরে
ওটার থেকেও শক্তিশালি জ্বিন ঢুকিয়ে
দেয়। ওই জ্বিনটা আমার রক্ত খাওয়া
জ্বিনটাকে মেরে ফেললো। ওই জ্বিনটার
একটি শর্ত ছিলো। ও প্রতিদিন রক্ত খেতে
চাই।ও আমার শরীরে পসেসড করে। তাই
আমি প্রতিদিন রাতে রক্তপান করি। আর
রক্তগুলো দেই তোমার বাবা ব্লাড ব্যাংক
থেকে এনে। আসলে বিয়ের আগে আমি
তুমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার
বাবা বলতে দেই নি। তবুও তুমি যদি
আমাকে…. ” এতটুকু বলার পর শায়লা আমার
কাছ থেকে উঠে চলে গেলো। জানি
মেয়েটা এখন কান্না করবে। কোন মতে উঠে
বসে ডাক দিলাম “শায়লা এদিকে এস। “
শায়লা চোখ মুছতে মুছতে এসে আমার
পাশে দাঁড়ালো। “আচ্ছা শায়লা, বাবার
বদলে যদি আমি রক্ত এনে দেয় তাহলে কোন
অসুবিধা হবে ? “
শায়লা আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর আমিও
আমার ভ্যাম্পায়ার বউ কে।

Leave a Comment