ভূতের গল্প । Ghost Story

পর্বঃ ১ আমি নাঈম। আমার বাবা একজন আর্মি ছিলেন। তাই না চাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়।বর্তমানে আমরা এখন যশোরে আছি। কিন্তু যে ঘটনাটি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই, সেটি ঘটেছিল ৬ বছর আগে। তখন আমরা ছিলাম বগুড়াতে। তখন আমি ক্লাস ৬ এ পড়তাম। বাবা আর্মি মিশনের জন্য দেশের বাইরে গেছিল। তখন আমাদের সরকারি বাসা ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে বাসা ভাড়া নিতে হয়। আর সেই জায়গাটা ছিল একটা ভয়ানক জায়গা, যে জায়গাটা আমি খুব ভয় পেতাম। বাবা যে জায়গাটি ভাড়া নিয়েছিল, সেটি ছিল কবর স্থানের পাশে। সেখানে না থাকার জন্য অনেক নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু বাবা-মা বলত, কবর স্থানে মত নিরাপদ জায়গা নাকি হয় না। তারপরও ইচছা না থাকার সত্ত্বেও সেখানে যেতে হল। নতুন জায়গায় যাওয়ার পর অনেক লোকের মুখে অনেক কথা শুনেছিলাম ঔ কবর স্থান সম্পর্কে যা মনে হলে আমার গা এখনও শিউরে উঠে। ঔ কবর স্থানটি ছিল অন্য রকম। মূলত আগে ঔখানে একটি বাঁশ ঝাড় ছিল। তারপর বাঁশ কেটে অনেক জায়গা তৈরি হওয়াতে কবর স্থান করে ফেলে। নতুন বাসার মধ্যে যেখানে আমার রুমের জানালা ছিল, সেখান থেকে কবর স্থানটি সহজেই ভালমত দেখা যেত। সেদিন ছিল গরম কাল। অতিরিক্ত গরম পরার কারণে জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিলাম। মাঝ রাতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। তখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জানালাটি বন্ধ করার জন্য আমি জানালা পাশে গেলাম। হঠাৎ করে আমার চোখ গেল, কবর স্থানের দিকে। এতই অন্ধকার ছিল যে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মাঝে মাঝে বিদুতের আলোতে খুব ভয়ানক লাগছিল কবর স্থানটি। তারপর হঠাৎ করেই চোখ গেল একটি কবরের দিকে। অল্প আলো থাকায় ভালত দেখা যাচ্ছিল না, সেখানে কি হচ্ছে। তারপরও ভালমত দেখার চেষ্টা করছিলাম। দেখি সেই কবরের মাটি ক্রমেই ঝরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন হাত দিয়ে কবর খুড়চ্ছে। তারপর সেই কবর থেকে হঠাৎ একটি হাত উঠে এল। আস্তে আস্তে সেখান থেকে একটি মানুষের আকৄতির মত কিছু একটা দেখা গেল। সেটি ছিল অনেক বড়। সেটির গায়ে ছিল সাদা রঙের কাপড়। তারপর সেটি এক কবর থেকে অন্য কবরে ঘুরাঘুরি করছিল। আমার খুব ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল জানালা লাগিয়ে দৌড়েঁ মার কাছে গিয়ে শুয়ে পরি। কিন্তু দেখারও খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি যে সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা আমার সাথে ঘটত চলচ্ছে। কিছুক্ষণ এরকম চলার পর সেটি হঠাৎ আমার জানালার দিকে তাকাল। জানালার পাশে যে কবরটা ছিল, সেটি দিকে আসতে লাগল। এতে আমা খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমি সেটির মুখের দিকে তাকালাম। কিন্তু অন্ধকারের জন্য কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর হঠাৎ বিদুতের আলো পরায় সেটির মুখটা দেখতে পেলাম। আমি যা দেখলাম তা কখনই আমি আশা করিনি। আমার শরীর ঠান্ডা হতে লাগল। কারণ সেটির মুখ ছিল, রক্তমাখা এক বিভর্ষ মুখ। আমি সেখানে স্থির হয়ে গেলাম। আমার নড়ার কোন শক্তি ছিল না। জানালাটা লাগানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। কতক্ষণ এইভাবে চলার পর আমি মাটিতে পরে যাই। যখন চোখ খুলি তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। পাশে দেখি মা বসে আছে। মার কাছে জানতে পারি, আমি সারা রাত অজ্ঞান ছিলাম। সবাই আমাকে প্রশ্ন করতে লাগল, কি হয়েছিল রাতে ? কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলে পারিনি। আমি কখনই এই ঘটনা ভুলতে পারব না।

পর্বঃ ২

আজকের গল্পটি নিছক গল্প নয় সত্য ঘটনা।ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সবেমাত্র ডিগ্রিতে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছি। উঠতি মাস্তান বোহিমিয়ান। ধরাকে সরা জ্ঞান করা স্বভাবদোষে পরিনত হয়ে গিয়েছিল। সবার চাইতে একটু বেশী বোঝা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করায় ছিল রাজ্যের আনন্দ। সবার মধ্যেই এই জাতীয় উপসর্গ গুলি এক সময় বাসা বাধে সময়ের প্রবাহে শিক্ষা, জ্ঞান ও পারিপার্শ্বীকতায় ক্রমেই দোষগুলি কাটতে থাকে। অ…তি সাধারন যারা তাদের মধ্যেই এই সকল দোষের প্রাধান্য একটু বেশী লক্ষ করা যায় । তাই আমার দোষের অন্ত ছিল না। এর মধ্যেই অবিশ্বাষীর দলে নাম লিখিয়ে ফেলেছি, ধর্মের চুলচেরা বিষ্লেশন শুরু করেছি। এলাকারবাঘা বাঘা ধর্ম বিশ্বাষীকে বির্তকের জালে আটকে শিষ্যত্ব বরণে বাধ্য করেছি। তবে আমার ভেতর একটা ছন্নছাড়া ভাব সবসমায় কাজ করত তাই একটি বিষয়ের মধ্যে নিজেকে বেশীদিন আটকে রাখতে পারতাম না। বিষয় ভেদে চালাতাম পরিক্ষা নিরিক্ষা যতদিন ভাল লাগত ততদিন। কিন্তু গুনি মানুষ গুলির বচন ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন। তারা বলতেন চর্চা, চর্চা ও চর্চা ছাড়া কোন বিষয়কে আয়ত্ব করা যায় না। কে শোনে কার কথা নিজের ইচ্ছার কাছে সমস্ত বিষয় গুলিকে বলি দিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। জীবনযুদ্ধে যারা সফল সেই রকম কেউ আমার কাছে এলে একটি দু:খবোধ যেন আমাকে ছুয়ে যায়। তা ছাড়া বিন্দাস আছি।বিশ্বাসের ধারাটা এখন একটু পাল্টেছে আল্লার অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করতে পারি না। যুক্তি ও তর্কের মধ্যে আল্লার অস্তিত্ব বার বার উপলদ্ধি করি। তবে প্রচলিত ধর্মগুলিতে বিশ্বাসনেই। মানুষে মানুষে প্রভেদ খুজে পাই না। সবার মাঝেই মানবিক দোষগুন গুলি প্রত্যক্ষ করি। তাই ধর্ম দিয়ে মানুষকে ভাগ করাকে নিরঅর্থক মনে হয়।
যে ঘটনাটা বলতে যাচ্ছি তার সাথে উপরিউল্লেখিত বিষয় গুলির একটি সর্ম্পক আছে বিধায় বলতে হলো। আমার এক বন্ধু নাম ধরুন রফিক ক্লাস ফাইভ থেকেইবন্ধুত্ব বছর দুয়েক হলো ওর বাবা গত হয়েছে। বড়ভাই হওয়ার সুবাদে স্বভাবতই ওর কাধেই সংশারের যোয়ালটা নেমে এসেছিল। মা দুবোন তিন ভাইএর সংশার। বাবা মারা যাবার পর ওদের সংশারে নেমে এসেছিল নিদারুন দু:খকষ্ট যা নাকি ওকে বাধ্য করেছিল পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকুরীতে লাগতে। ও মট্রিক পাশ করে পাটকলের সুপার ভাইজার হিসাবে ঢুকেছিলসেই কবে আজও ঐ একই চাকরীতে লেগে আছে। কোন উন্নতিও নেই অবনতিও নেই। বোন দুটির বিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু কপাল দোষে দুজনেই ওর কাধে বোঝা হয়ে ফিরে এসেছে যার যার সন্তানসহ। আমি বরাবরই অলৌকিকতায় বিশ্বাস করি না। রফিক তখনও বিয়ে করেনি। এক শুক্রবার আমার বাসায় এসে ও আমাকে বলল দোস একটু বিপদে পড়েছি। আমি বললাম র্নিদিধায় বল আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমি করব। ও যাবলল তা শুনে আমার মনে হলো ও মানশিক ভাবে সুস্থ কি না। জিন ভুত এগুলির অস্বিস্ত কোনটাই বিশ্বাস করি না। ওর বক্তব্য অনুযায়ী রাতে ঘুমুতে গেলেই কে বা কারা যেন ওদের টিনের দেয়ালে খামাখাই জোরে জোরে আচর কাটতে থাকে যারফলে ঘুমানোটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কোন প্রকার সংগত কারন ছাড়াই ঘটনাটি গত এক মাস ধরে রোজ রাতেই ঘটছে। আমি বললাম ও’কে আজ রাতে আমি তোর সাথে তোদের বাসায়গিয়ে থাকব। একটি হকিষ্টিক ও টর্চলাইটের ব্যাবস্থা করে রাখিস। আমিসময়মত পৌছে যাব। রাত দশটা নাগাদ রাজ্যের রাজকর্ম সেরে ওদের বাসায় গিয়ে পৌছালাম। ওদের বাসাটা শহরতলীর প্রায় শেষ প্রান্তে অবস্থিত রাস্তার উপরে একটি দোতালা বাড়ী তার পেছনে পনারবিশ গজ ফারাকে ওদের সর্ম্পুন টিনের ঘড়টি হালকা গাছগাছালীতে ঢাকা ওদের বাড়ীর পেছনে আর কোন বাড়ী নেই ঢাকার ভাষায় তখন সেই অঞ্চলকে নামা বলত(নীচু ফসলের জমি ও খাল বিলের সমারোহ)।রাতের খাবার খেয়েই রাত বারোটা নাগাদ আমরা দুই বন্ধু ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম রফিক বললো লাইট নিভানোর পড়েই শুরু হবে অত্যাচার। আমাকে আরো বললো এমনিতে কোন ভয় নেই এপর্যন্ত কোন ক্ষতিকরেনি শব্দ করা ছাড়া। লাইট নেভানোর সাথে সাথেই শুরু হয়ে গলে ভুতের খেলা। আমি আর রফিক লাইট জালিয়ে হকিষ্টিক ও টর্চ হাতে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ীর চারপাশটা ঘুরে দেখে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা সন্দেহটাও আর রইল না। বাড়ীটার পাঁচ গজের মধ্যে কোন গাছের ডাল পর্যন্ত নেই যে বাতাসে তা টিনের দেয়ালে টক্কর খেয়ে এজাতীয় শব্দ হবে। মনে মনে কিছুটা দমে গেলাম। এ কেমন খেলা রফিককে বললাম তুই ঘড়ে ঢুকে লাইট নিবিয়ে দিয়ে শুয়ে পর আমি একটু পর আসছি। ও ঘরে ঢুকে দরজাটা ভিজিয়ে দিয়ে শুয়ে লাইটটা নিভিয়ে দিতেই আবার শুরু হলো একই শব্দ এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম আশে পাশে জনমানুষের কোন উপস্থিতি নেই তবুও শব্দটা আসছে। এমন ভয় জীবনে কখনো পেয়েছিলাম বলে আমার পড়েনা। তাই তাড়াতাড়ি ঘড়ে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। সকালে কাউকে কিচ্ছুটি না বলেই চলে এলাম আর অনাবরত মনে একটি প্রশ্নই উদয় হতে থাকলো কারন ছাড়া এটা ঘটতেই পারে না কিন্তু করানটা কি? পৃথিবীর সমস্ত নামকরা নামকরা মনোবিজ্ঞানীদের কেস হিষ্ট্রি গুলো পড়ে যাচ্ছি যুতসই কোন উত্তরই খুজে পাচ্ছি না। দুবছর পর উত্তর বেড়িয়ে এল পশ্চিম বাংলা বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতিপ্রবির ঘোষের লেখা বইটি থেকে। বইটির নাম ভুলে গেছি।সাথে সাথেই রফিককে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম দোছ আওয়াজ তোমার ঘড়ের ভিতর থেকেই কেউ করছেযে তোমাদের দায়িত্বহীনতায় তোমাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে এসব করে তোমাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। যদি আমার কথা বিশ্বাস কর তো তুমি তোমার দুই বোনকে যেভাবেই হোক তাদের সংশারে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা কর তাহলেই আমার বিশ্বাস তুমি এ নরক যন্ত্রনা থেকে রেহাই পাবে।এরপর রফিক মাসখানেক দেন দরবার করে ওর বোনের স্বামীদের সাথে একটি আপোশ রফায় এসে বোনদের স্বামীর বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকে সেই ভুতও আর ওদের জ্বালায়নি।

Leave a Comment