রহস্যময় ভূতের গল্প । Horror Stoty

পুরোটা গ্রাম নিখুঁত নৈশব্দতায় ডুবে থাকলেও আঁধারের রেখা
কাঁপিয়ে ভেসে আসে এক নারীর করুন সুরের কান্না। চারপাশে
ধানি জমি আরহাওরের মধ্যেখানে টিলার উপর পাকা দালান টা জগলু
ডাকাতের।দূর থেকে দেখলে ওটাকে ভেসে থাকা দ্বীপ
মনে হয়। নারী কণ্ঠের কান্না ওখান থেকেই আসছে। জগলু
ডাকাতের স্ত্রী লায়লা কেঁদে যাচ্ছে সমানে। জগলু ডাকাত
ঘরের পেছনে করুই গাছটার নিচে কপালে হাত দিয়ে বসে
আছে। আজ বিকেলে তাদের ১১ বছর বয়সী সন্তান নয়ন কে
ঠিক এখানটাতেই মৃত পাওয়া গেছে। তার নিথর দেহ ধনচে গাছের
উপর অল্প পানিতে পরে ছিল। লায়লা এই দৃশ্য দেখে বিকট চিৎকার
দিয়ে অজ্ঞান হয়।একটা ব্যাপারে কেউই সস্তি পাচ্ছেনা।
ছেলেটার মৃত্যু বেশ রহস্যজনক। রহস্যময় ভূতের গল্প নিয়ে গ্রামের সবাই আলোচনা করছে। নীলচে দেহ টাকে
দেখে মনে হয়েছে সাপে কাটা। কিন্তু পই পই করে খুজেও
সাপে কাটার দাগ খুজে পায়নি কেউ। বাড়ির ডানপাশেই ওর কবর
দেয়া হয়েছে। জগলু ডাকাত আর পুলিশি ঝামেলায় যায়নি। অনেক
তো হলো এই চোর পুলিশ খেলা। কি হত ওদের কাছে
যেয়ে! অহেতুক নিষ্পাপ ছেলেটাকে কেটে চিঁরে
হেনেস্থা অবস্থা করতো।বুক ফুঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে
আসে তার। এই গ্রামে ডাকাতি না করলেও অন্যান্য গ্রামে সে
কুখ্যাত ডাকাত হিসেবেই পরিচিত। থানা পুলিশেও ভালোই খাতির। এক
জীবনে কতো লুটতারাজ করেছে তার দল সেই হিসেব
নেই। মানুষ ও খুন করেছে দু- তিন টা।ভাবনার মাঝেই মৃদু শব্দ হল।
জগলু ডাকাত চমকে আশে পাশে তাকায়। নাহ কেউ নেই। কারু
থাকার ও কথানা। বর্ষাকালে এখানে যাতায়াতের জন্য নৌকা পথ ছাড়া আর
উপায় নেই। সুতরাং হুট করে বাইরের কারু আসার প্রশ্নই আসেনা।
কিন্তু শব্দ তো একটা পেলো। লায়লা নাকি ? হতে পারে। কান্নার
শব্দ আর আসছেনা। বেচারি সারা সন্ধ্যা কেঁদেছে আর জ্ঞান
হারিয়েছে।আবারও খসখস শব্দ! মনে হল উপর থেকে
আসছে। জগলু ডাকাত চোখ পিট পিট করে উপরে তাকায়। কেউ
যেন একটি ডালের সাথে আরেকটি ডাল সজোরে নাড়িয়ে
দিচ্ছে। সেই কারনে গাছের কিছু পাতা ঝরে পরছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল কোথাও বাতাসের রেশ মাত্রও নেই!
তাহলে হচ্ছেটা কি !? বেশকিছুক্ষন উপরে তাকিয়ে থেকে
চমকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। চোখ দুটো ফালা ফালা
করে তাকিয়ে থাকে মাথার ঠিক উপরের ডালটারদিকে। ওমন
অন্ধকারেও কোথা থেকে লালাভ একটা আলোর পিণ্ড জলে
উঠলো । সেই আলোয় একটা ছোট্ট মেয়ের বিকৃত অবয়ব
ভেসেউঠলো। লালাভ আলোয় কালচে নীল মুখটা হা
করতেই সাপের মতো কালো জীভ বেড়িয়ে এসে জগলু
ডাকাত কে পেঁচিয়ে ধরলো। আঁতকে কেঁপে উঠে
কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পাগলের মতো দৌড়
দেয় সে। ঘরে ঢুকেই খিল দেয় দরজায়। হাপরের মতো
হাঁপাচ্ছে। এ কি দেখল! নিশ্চয় চোখের ভুল! টেবিলে রাখা পানি
গটগট করে পান করে খাটে এসে বসলো। সাথে সাথেই
সমস্ত শরীরে লেগে থাকা তরল আঠালো পদার্থের দিকে
চোখ গেলো। এটা কি !! আঙুলের ডগায় কিছুটা নিয়ে ভালো
করে তাকায় জগলু ডাকাত। তারপর ধড়ফড় করে আয়নার সামনে
দাড়ায়। কালো তরললেপটে আছে সারা শরীরে। হঠাৎ সে
স্তব্দ হয়ে গেলো। আয়নার ভেতর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে
একটা কালো সাপ তার সমস্ত শরীর পেঁচিয়ে ধীর গতিতে
চলাচল করছে! বিস্ফোরিত চোখে সশরীররে হাতরে কিছুই
পেলো না। এগুলো হচ্ছেটা কি !!?এর পরের দৃশ্য আরও
ভয়ংকর। আয়নার এক পাশে ভেসে উঠলো এক অদ্ভুত দৃশ্যপট।
ঝোপ ঝার আর পানির মধ্যে কোথা থেকে একটি বাচ্চা মেয়ে
আছড়ে পড়লো। কেউ যেন ওকে সজোরে ছুঁড়ে
ফেললো। আরে…! একটা বিষাক্ত সাপ এগিয়ে আসছে ওর
দিকে! একি! মেয়েটা কে ছোবল দিয়েই সাপটা উধাও!! মুখ দিয়ে
সাদা ফেনা ভাঙছে তার। সমস্ত শরীরে কালচে নিলাভ রং!
চোখের মনি দুটো উল্টে প্রায় ভেতরে ঢুকেগেলো।
জগলু ডাকাত আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। মাথা ঝিমঝিমকরে
উঠতেই চোখ বন্ধ করে জ্ঞান হারালো।
লায়লা দুয়া দুরুদ পড়ছে আর স্বামীর উপর ফু দিচ্ছে। হাতের
পাশেই বালতি আর জগ। জগলু ডাকাত বিরবির করে যাচ্ছে জরের
ঘোরে।….সেই রাতেরই কথা। মাঝরাতে ঘুম ভাঙতেই উঠে
বসে জগলু ডাকাত। ক্লান্ত লায়লা ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে। ঘরে
হারিকেনেরমৃদু আলোটা কেঁপে কেঁপে খেলাকরছে।
কেমন রহস্যময় থমথমে পরিবেশ। হঠাৎ খাট টা একটু দুলে খুট
করে শব্দ হলো। জগলু ডাকাত কান খাড়া করে রাখে। খাটের
নিচে উঁকি দেবার সাহস হয় না। তখনি উঁ উঁ করে একটা ছোট্ট বাচ্চার
কান্নার সুর ভেসে এলো। জগলু ডাকাত ঘেমে নেয়ে
যাচ্ছে। কান্নাটা নিকট থেকে নিকটরত হচ্ছে। মনে হলো
খাটের নিচে কেউ হেঁচড়ে হেঁচড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জগলু
ডাকাত লায়লা কে ডাকতে চাইতেইকণ্ঠ দিয়ে অস্ফুট শব্দ ছাড়া কিছুই
বেরুলো না। এরপরে যা দেখল তাতে ভয়ে রক্ত জমে
যাওয়ার উপক্রম। খাটের নিচ থেকে চাদর উঁচিয়ে এঁকে
বেঁকেগড়িয়ে একটি ছোট্ট মেয়ে বেড়িয়ে এলো।
মেয়েটির দৃষ্টি জগলু ডাকাতের দিকে স্থির। চিঁরে যাওয়া জীভ
লকলক করে বের করতেই টপ টপ করে ক ফোটা রক্ত
গড়িয়ে পড়লো । ওর নীলচে মুখে কালো কালো বিন্দু
যেন সতসত সাপের দংশন চিহ্ন। মেয়েটি এবার সাপ যেভাবে
খোলসছাড়ায় ঠিক সেভাবে শরীরের চামরা থেকে নিজেকে
ছাড়িয়ে নিলো। জগলু ডাকাত বিস্ফোরিত চোখে দেখল মানুষ
দেহ থেকে তেলতেলে কুতছিৎ কালো একটি সাপ বের
হচ্ছে। ওইতো মাথার খুলি ফুঁড়ে বেড়িয়ে এসেছে সাপের
ফণা!জগলু ডাকাত চলে গেলো অনেক দিন আগের এক
আষাঢ়ের রাতে। গুমোট বাঁধা অন্ধকার সেই রাত্রিতে তার দল হানা
দিয়েছিলো তারাঘর নামের এক গ্রামে। সেদিন আগুনে ঝলসে
গিয়েছিলো মানুষ সহ পশু পাখি।লাঠি হাতে গ্রামবাসী এগিয়ে
এলেও সুবিধা করতে পারেনি। তার দল দমিয়ে দিয়েছিলো সব।
এরমাঝেই কোথা থেকে একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে জগলু
ডাকাতের হাতের নাগালে আসতেই এক ঝটকায় ছুঁড়ে
ফেরেছিল জংলার ধারে। অমানসিক পৈশাচিকতায় তার দল দুমরে
মুচরে দিয়েছিলো কিছু পরিবার কে।জগলু ডাকাত দরদর করে
ঘামছে। তাহলে কি জংলায় ছুঁড়ে ফেলা সেই ছোট্ট মেয়েটার
পরিনতিই সে আয়নায় দেখেছে !? ব্যাঘাতে প্রাণটা তার কারনেই
গেছে। সেই প্রতিশোধই নিলো ওর একমাত্র সন্তানটাকে
মেরে ফেলে। উফ! আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে। সমস্ত
শরীর তিরতির করে কাঁপছে। লায়লাকে আবার ডাকতেই মেঝে
থেকে গুঙ্গানির শব্দ আসলো। হতবাক হয়ে সেদিকেই
চেয়ে থাকে জগলু ডাকাত। হাজার হাজার সাপ কিলবিল করে
বেড়িয়ে আসছে খাটের নিচ থেকে। ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত
ঘরে। ঘরের মেঝেতে সাপগুলো কিলবিলিয়ে সমুদ্রের পানির
মতো ঢেউ তুলছে। দেয়াল বেয়ে উপরে উঠছে। কিছু সাপ
খাটের পায়াতেপেঁচিয়ে আছে। যে কোন মুহূর্তে উপরে
এসে তাকে ছোবলদিতে পারে ওগুলো। ভ্রান্ত ভেবে
চোখ কচলে ফের তাকায় জগলু ডাকাত। নাহ! সত্যি তাকে ঘিরে
সহস্র সাপ কিলবিল করছে।পেট উগলে বমি করে সে। লায়লা
এবার যেন একটু নড়ে উঠে। আশার আলো নিয়ে সেদিকে
তাকাতেই বিমষ খায় জগলু ডাকাত। নায়লারসমস্ত শরীর মানুষের
হলেও মাথা টা একটি সাপের। বিন্দুরমতো চোখ দুটো জলছে।
লকলকে জীভ বের করে সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
কোনমতে খাট থেকেলাফিয়ে পরে জগলু ডাকাত। পায়ের
তলায় গাঁ ঘিন ঘিন করা পিচ্ছল তৈলাক্ত অনুভূতি। বড্ড ভুল হয়ে গেছে!
খাট থেকে নেমে সাপের আখড়ায় পা দিলো। খাটের দিক
ফিরে চাইতেই দেখে ওখানে লায়লার বদলে মোটা একটিসাপ
শুয়ে আছে। দরজা বরাবর এগুতে চায় জগলু। কিন্তু পা দুটোকে
শিকলের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে সাপগুলো। এরমধ্যেই
দেখে ভয়ংকর দৃশ্যটি! ঘরের ঠিক মাঝখান থেকে ফণা তুলে উঁকি
দেয় লালচে একটি সাপ। তারপর ঢেউ খেলিয়ে এগিয়ে আসে
তার দিকে। জগলু ডাকাত যতই পালাবার চেষ্টা করছে ততোই
পোক্ত হচ্ছে পায়ের বাঁধন। একসময় প্রচণ্ড বেগে সাপের
ফণা ছুটে আসে তার দিকে। লেপটে থাকে সমস্ত মুখে।
গলায়কোনকিছু সজোরে পেঁচিয়ে ধরার অস্তিত্ত টের
পেতেই নিঃশ্বাস নিতে না পেরে হাত পা ছুড়তে থাকে জগলু
ডাকাত। লাল টকটকে হয়ে যাওয়া চোখ দুটো বেড়িয়ে
আসতে চায় কোঠর থেকে। সাদা ফেনার মতো তরল গড়ায় মুখ
দিয়ে। দু হাত দিয়ে কণ্ঠনালী আর অবয়ব থেকে ছাড়াতে চায়
পেঁচিয়ে থাকা সাপটি কে। কিন্তু ওটা তার সাধ্যের বাইরে। ধীরে
ধীরে জগলু ডাকাতের সমস্ত শরীর ঢাকা পরে সাপের
আড়ালে…।কিলবিলে কালো মেঝেতে ভেসে থাকে একটি
বিদ্ধস্ত হাত।এর পরের দিন লায়লার ঘুম ভাঙতেই স্বামীর বিকৃত
লাশটা কে নিজের পাশে দেখতে পেয়েই জ্ঞান হারায়।
খাটের উপর জগলুডাকাতের নিথর দেহটা দেখে মনেহয় সহস্র
সাপের দংশনে বিকৃত হয়েআছে। তার পুর্ব পাপের মাশুল
হিসেবে তার ও ছোট শিশুটার জীবন দিতে হল।
এটি একটি কল্পনাপ্রবন কাহিনী।

Leave a Comment